প্রথম প্রজন্ম- First Generation (১৯৪২-১৯৫৯ খ্রি.)

- তথ্য প্রযুক্তি - কম্পিউটার (Computer) | | NCTB BOOK
1

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার বা First Generation Computer (1946-1959)

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার (১৯৪৬-১৯৫৯) হলো সেই কম্পিউটারগুলো, যা ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল। এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো ছিল বড় আকারের, ধীরগতি সম্পন্ন এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারে অদক্ষ। তবুও, এই কম্পিউটারগুলো আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল।

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:

  • প্রযুক্তি: ভ্যাকুয়াম টিউব, যা বৈদ্যুতিক সংকেতকে নিয়ন্ত্রণ এবং প্রসেসিং করতে ব্যবহৃত হতো।
  • আকার: এই কম্পিউটারগুলো বিশাল আকারের ছিল এবং একটি পুরো কক্ষ জুড়ে থাকত।
  • বিদ্যুৎ খরচ: প্রচুর বিদ্যুৎ ব্যবহার করত এবং প্রচুর তাপ উৎপন্ন করত, যা ঠান্ডা করার জন্য অতিরিক্ত কুলিং ব্যবস্থা প্রয়োজন হতো।
  • প্রোগ্রামিং ভাষা: মেশিন ভাষা এবং অ্যাসেম্বলি ভাষা ব্যবহার করে প্রোগ্রাম করা হতো।
  • মেমোরি: প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে ড্রাম মেমোরি বা ম্যাগনেটিক ড্রাম ব্যবহৃত হতো, যা কম্পিউটারের প্রধান মেমোরি হিসেবে কাজ করত।

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ:

ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Computer):

  • এটি প্রথম কার্যকরী ইলেকট্রনিক কম্পিউটার, যা যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৪৫ সালে জন প্রেসপার একার্ট (John Presper Eckert) এবং জন মাউচলি (John Mauchly) এর নেতৃত্বে তৈরি করা হয়।
  • ENIAC গাণিতিক হিসাব করতে পারত, বিশেষ করে সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো, যেমন গোলাবারুদ এবং ক্ষেপণাস্ত্রের হিসাব।
  • এটি প্রায় ১৮,০০০ ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল এবং এর ওজন ছিল প্রায় ৩০ টন।

EDVAC (Electronic Discrete Variable Automatic Computer):

  • ENIAC-এর উন্নত সংস্করণ এবং প্রথম কম্পিউটার যা স্টোরড প্রোগ্রাম ধারণা ব্যবহার করে। এটি ১৯৪৯ সালে তৈরি হয়।
  • জন ভন নিউম্যান (John von Neumann) এর নেতৃত্বে EDVAC ডিজাইন করা হয়েছিল এবং এটি মেমোরিতে প্রোগ্রাম সংরক্ষণ করে রাখত।

UNIVAC I (Universal Automatic Computer):

  • এটি ১৯৫১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হয়েছিল এবং ছিল প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত কম্পিউটার।
  • UNIVAC I যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারির কাজে এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হতো।
  • এটি ছিল প্রথম কম্পিউটার যা বড় আকারে ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের সুবিধা:

  • স্বয়ংক্রিয় গণনা: প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো মানুষের গণনা করার সময় এবং প্রচেষ্টাকে অনেকগুণ কমিয়ে দেয়।
  • গাণিতিক এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সহায়ক: এই কম্পিউটারগুলো গণিত, পদার্থবিদ্যা, এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
  • ডিজিটাল কম্পিউটারের ধারণার বিকাশ: প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার ডিজিটাল কম্পিউটারের ধারণা বিকাশ করে এবং পরবর্তী প্রজন্মের উন্নত কম্পিউটারের জন্য পথ তৈরি করে।

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের সীমাবদ্ধতা:

  • বিশাল আকার: প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো খুবই বড় এবং ভারী ছিল, যা স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন ছিল।
  • বিদ্যুৎ খরচ এবং তাপ উৎপাদন: প্রচুর বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণে এটি চালানো ব্যয়বহুল ছিল এবং অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন করত, যার জন্য কুলিং সিস্টেম প্রয়োজন হতো।
  • বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব: ভ্যাকুয়াম টিউবগুলো প্রায়ই ত্রুটিপূর্ণ হতো এবং এগুলোর পরিবর্তন করতে সময় এবং প্রচেষ্টা ব্যয় করতে হতো।
  • ধীরগতি এবং সীমিত মেমোরি: প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোর গতি সীমিত ছিল এবং মেমোরি কম ছিল, যা বড় এবং জটিল কাজ সম্পাদন করতে পারত না।

সারসংক্ষেপ:

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির বিকাশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। যদিও সেগুলো আকারে বিশাল, ধীরগতির, এবং ত্রুটিপূর্ণ ছিল, তারপরও এগুলোর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় গণনা এবং ডেটা প্রক্রিয়াকরণে বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছিল। প্রথম প্রজন্মের অভিজ্ঞতা এবং সীমাবদ্ধতা পরবর্তী প্রজন্মের উন্নয়নের জন্য মূল্যবান শিক্ষা হিসেবে কাজ করেছে।

Content updated By
Promotion